শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১১ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র আঘাতে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার লঞ্চঘাট সংলগ্ন বিষখালী নদীর তীরের এক কিলোমিটার বেরিবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলার চার উপজেলায় বেশ কয়েকটি গ্রামে বড় গাছ পরে বসত ঘর ভেঙ্গে তছনচ হয়ে গেছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উপকূলীয় উপজেলা কাঁঠালিয়া।
কাঁঠালিয়া উপজেলায় গাছ উপড়ে পড়ে বহু ঘর গাছের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের নয়টি খুঁটি ভেঙ্গে ও হেলে গিয়ে তিন কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কচুয়া ফিডেরর গ্রাম গুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
নলছিটি শহরের উপজেলা পরিষদ চত্তরের পুরাতন মসজিদের বারান্দার উপর গাছ উপড়ে পরে বারান্দাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পৌরসভার সারদল এলাকা গাছ উপড়ে পরে বিদ্যুতের তারের ওপর পরে বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলার ষাটপাকিয়া-কালিজিরা এলাকা, দপদপিয়া লঞ্চঘাট এলাকায়ও বেশ কিছু বড় গাছ বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের উপর উপড়ে পরায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকা।এছাড়াও জেলার চার উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম গুলোতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
একটানা ২৪ ঘন্টার বৃষ্টি এবং জোয়ারে বেড়েছে ঝালকাঠি সকল নদীর পানি। জেলার বিভিন্ন আবাদি জমিতে গিয়ে দেখা গেছে আমন ধানের অধিকাংশই দমকা হাওয়ায় শুয়ে পরেছে। অনেক স্থানের আমন আবাদ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ফলে আমন আবাদের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা আশঙ্কা করছেন কেবল মুকুল ধরা শুয়ে পরা ধানের গাছে আর ধান বেড় হবে না, কিংবা হলেও পচে যাওয়া ও ধানে চিটা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় আছেন। শীতকালীন সবজি চাষিরাও পড়েছেন বিপাকে। এ বৃষ্টিতে শীতকালীন শাক-সবজি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা চাষিদের।
কৃষক বাবুল জানান, বৃষ্টির ও বন্যার পানিতে আমাদের শীতকালীর সবজি চাষের জমিগুলোতে পানি জমে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে প্রতিটি কৃষিক্ষেতের পাশে নালা কেটে দেওয়ায় এখন পর্যন্ত ভালো আছে।
কৃষক দুলাল মোল্লা জানান, বৃষ্টি আর বাতাসে আমনের ধান মাটিতে পড়ে পানির নিচে তলিয়ে আছে। শীতকালীর সবজি চাষের জমিগুলোতে পানি জমে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি ও বাতাসে শুয়ে পড়া আমন ধানের তেমন বেশি ক্ষতির আশঙ্কা নেই। আমান আবাদে যেসব বীজের মাথায় ধান এসেছে সেগুলো শুয়ে পড়েছে। কিন্তু এখনও বেশিরভাগ ধানে থোর পর্যন্ত হয়েছে, মাথায় ভার না হওয়ায় সেগুলো শুয়ে পড়বে না। জেলায় আনুমানিক পাঁচশত হেক্টর পাকা উপসী আমন, ২ শত হেক্টর দুধকলম ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শীতকালীন সবজির বিষয়ে তিনি জানান, যেসব স্থানে শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়, সেসব ক্ষেতগুলো সজ্জন বা কাঁদি পদ্ধতিতে। এজন্য পানি জমতে না পারায় কৃষি ক্ষেতে ক্ষতির আশঙ্কাও খুবই কম। শাকসবজি জেলায় ১৫৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে আনুমানিক ক্ষতি ১১০ হেক্টর ক্ষতি হতে পারে। জেলায় ৩৩০০ হেক্টর খেসারীর মধ্যে আনুমানিক ৭০০ হেক্টর ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পাঁচশত হেক্টর কলাবাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
Leave a Reply